২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি মঙ্গল অভিযানে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এক দম্পতি। মার্কিন ধনকুবের ডেনিস টিটোর অর্থায়নে পরিচালিত হবে এই মঙ্গল মিশন। মঙ্গল গ্রহের এ অভিযানে এক দম্পতিকে বেছে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মহাকাশ অভিজ্ঞ ধনকুবের ডেনিস টিটো।
মার্কিন ধনকুবের ডেনিস টিটো ‘দ্য ইনসপিরেশন মার্স ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। আর তাঁর এই প্রতিষ্ঠান থেকেই আনুমানিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে কোনো দম্পতিকে মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হবে। চলচ্চিত্রে দেখানো দৃশ্যের মতোই ছোটো একটি স্পেস ক্যাপসুলে দীর্ঘ দিন কাটাতে হবে মঙ্গল অভিযাত্রী দম্পতিকে।
দম্পতি কেনো?
ডেনিস টিটোর ভাষ্য, মঙ্গলের উদ্দেশ্যে প্রথমবার রওনা দেবে মানুষ। আর সেখানে নারী-পুরুষ দুজনের অংশগ্রহণ থাকা দরকার। তাই জরুরিভিত্তিতে বিবাহিত দম্পতির খোঁজ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের নিঃসঙ্গ এ যাত্রাপথে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন পড়বে। আবেগ আর সহানুভূতি থাকলে নিঃসঙ্গতার মানসিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন অভিযাত্রীরা। ১৪ কোটি মাইল পাড়ি দিয়ে মঙ্গলে পৌঁছালেও মঙ্গলের মাটিতে পা রাখার সৌভাগ্য তাঁদের হবে না। কারণ, মঙ্গলের মাটিতে নামবে না তাঁদের নভোযান। মঙ্গলের একশো মাইল কাছ থেকেই আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে হবে তাঁদের।
লক্ষ্য ২০১৮
ডেনিস টিটোর প্রতিষ্ঠানটির দাবি, আমরা ২০১৮ সালে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হতে চাই কারণ, এ সুযোগ হাতছাড়া হলে আর তা নাও পাওয়া যেতে পারে। ১৯৯৬ সালের একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী ২০১৮ সাল মঙ্গল অভিযানের জন্য উপযুক্ত সময়। প্রতি ১৫ বছর অন্তর পৃথিবী থেকে এ গ্রহটিতে অভিযান চালানো সহজ হয়। তাই ২০১৮ সালের সুযোগ হাতছাড়া হলে ২০৩১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
টিটো জানিয়েছেন, তিনি এ অভিযানে যাচ্ছেন না। এ অভিযানের জন্য মাঝবয়সী দক্ষ নভোচারী দম্পতিকে নির্বাচন করা হবে।
অভিযানের ঝুঁকি
অবশ্য এ অভিযানে ঝুঁকি রয়েছে প্রচুর। একবার নভোযান রওনা দিলে তা আর কোথাও থামবে না। টানা ৫০১ দিনের এ যাত্রা চলতেই থাকবে। কোনো ত্রুটি দেখা দিলেও গন্তব্যে না পৌঁছে ফিরে আসার উপায় নেই। প্রতি সেকেন্ডে নভোযানটি ১৪.২ কিলোমিটার গতিতে ছুটে যাবে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে।
মঙ্গল গ্রহের এ অভিযানের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন নভোযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যারাগনের কর্মকর্তা টাবির ম্যাককুলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে এ যাত্রা সফল করা সম্ভব।
সম্ভাবনা
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি এ অভিযানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে, অভিযাত্রীরা কি ছোটো ক্যাপসুলে দীর্ঘদিন আটক থাকার ধকল সইতে পারবেন? এ প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন, এ অভিযানের চিকিত্সক ও কর্মকর্তা জোনাথন ক্লার্ক। তাঁর মতে, অবশ্যই টিকে থাকতে সক্ষম হবেন অভিযাত্রীরা। এটা অনেকটাই নতুন প্রজন্মের জন্য অ্যাপোলো ৮ এর মতো মিশন। বিষয়টিতে নতুন প্রজন্মকে উত্সাহ দেওয়ার অনেক কিছু রয়েছে। অচেনা গভীর মহাকাশের পথের যাত্রীদের বাঁচিয়ে রাখা, সুস্থভাবে পৃথিবীতে ফেরত আনাটা উত্সাহ জোগাবে তাঁদের। নির্মম তেজস্ক্রিয়তা, অচেনা পথ, পরিবেশ, মহাকর্ষ টানহীন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার অভিজ্ঞতা লাভ করা যাবে। এ জন্য নির্বাচিত নভোচারীদের মধ্যবয়সী হতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের জিনগত পরিবর্তন ঘটানো হবে যাতে তাঁরা এই সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারেন। তিন হাজার পাউন্ড শুকনা খাবার, রিসাইকেল করা পানির উত্স আর জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপাদান সঙ্গে নিয়েই মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন নির্বাচিত দম্পতি।
টিটোর এ পরিকল্পনা সফল হলে, মঙ্গল গ্রহের যাত্রাপথে এ নভোচারীদের করা টুইট পড়ার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে বিশ্ববাসী।